৫। দীনু ভট্টাচার্য

‘পল্লীসমাজ' উপন্যাসে দীনু ভট্টাচার্যের চরিত্র অন্যরকম। তাঁর চরিত্রের মধ্যে দিয়ে ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র পল্লীসমাজে যে অভিজাত সম্প্রদায়ের স্বরূপ আছে তা তিনি উপস্থাপন করেছেন। দীনু একজন ব্রাহ্মণ। তাঁর অবস্থা স্বচ্ছল ছিল না । সে ছিল খুবই দরিদ্র। দীনুর মধ্যে নীচ মানসিকতার মনোভাব ছিল না। গ্রামের অন্যান্য ব্রাহ্মণদের সঙ্গে দীনুর তুলনা করা সম্ভব নয়। কারণ গ্রামের অন্যান্য ব্রাহ্মণরা ছিল হীন মানসিকতা সম্পন্ন । দীনু এমনই একজন ব্যক্তি যার মধ্যে নেই জাতপাত, নেই ভেদাভেদ আর অন্যের ক্ষতিসাধনের মানসিকতা তো ভাবনার বাইরে। তারিণী ঘোষালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রমেশ জমিদারি কারবারি চালায়। কিন্তু রমেশ ছিল সহজ-সরল। জমিদারি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। সেই সুযোগ নেয় গ্রামের মাতব্বররা। ধর্মদাস, গোবিন্দ প্রমুখ সমাজপতি রমেশের জমিদারী চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকার নমুনা পায়। যার ফলে তারা সর্বস্ব লুটপাট করে এবং তাকে সর্বস্বান্ত করে দেয়। কিন্তু দীনু ভট্টাচার্য সমাজপতিদের কারচুপি বুঝতে পেরে রমেশকে বোঝায়। তবে দীনু ভট্টাচার্য প্রকৃতিগত দিক থেকে একজন ভালো মনের মানুষ।

৬। গোবিন্দ গাঙ্গুলী

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত 'পল্লীসমাজ' উপন্যাসের অন্যতম খল চরিত্র হলো গোবিন্দ গাঙ্গুলি। গোবিন্দ গাঙ্গুলি পীড়ন ও শোষণকারী, কু-কর্মের সহযোগি ছিলেন। তিনি গ্রামের দরিদ্র মানুষদের ওপর অত্যাচার চালাত, তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিত। তিনি বেণী ঘোষালের কু-কর্মের সহযোগি। গোবিন্দ গাঙ্গুলির মধ্যে সবরকমই খারাপ গুণ আছে। তিনি যেমন স্বার্থপর মিথ্যাবাদী ছিলেন তেমনি ছিলেন নীচ। তাঁর মধ্যে শালীনতা, সহানুভূতি, স্নেহ, দয়া, অপমানবোধ কিছুই নেই। গোবিন্দ গাঙ্গলি পল্লীগ্রামের পাপের ভাণ্ডার। তার কথা মুখে আনাও পাপ। রমেশের প্রকৃতি ছিল সহজ-সরল তাই তাকে মিথ্যা মামলার ফাঁদে ফেলতেও পিছপা হয়নি। তাঁর জন্য তিনি সাক্ষীও জোগাড় করেছেন। দ্বারিক চক্রবর্তী মারা যাওয়ার জন্য গোবিন্দ গাঙ্গুলি দায়ী ।

৭। তারিণী ঘোষাল

শরৎচন্দ্রের রচিত ‘পল্লীসমাজ' উপন্যাসে অন্যতম পরোপকারী, উদারচেতা মানুষ ছিলেন তারিণী ঘোষাল। রমেশের পিতা তারিণী ঘোষাল। রমেশও পিতার মতো অর্থাৎ পিতার প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। গ্রামের অন্যান্য মানুষের মতো নির্মম, কূটনৈতিক, পীড়নকারী ছিলেন না। তিনি সর্বদা অসহায় মানুষদের পাশে থেকে তাদের যেকোনো উপকারে সচেষ্ট থাকতেন। তিনি এমনই এক মানুষ ছিলেন যার কাছে কেউ সাহায্য চেয়ে ব্যর্থ হয়নি। দীনু ভট্টাচার্য উদার, সাহায্যকারী, পরোপকারী তারিণীদাদার উচ্চ প্রশংসা করেছেন। তারিণী ঘোষালের সঙ্গে রমার বাবার বিরোধ ছিল।

 তিনি গ্রাম্য সমাজ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিল। রমার বাবা ছিলেন কুঁয়াপুর গ্রামের জমিদার। যার নাম ছিল যদু মুখুর্য্যে। তিনি অনেক সমাজ বিরোধী কাজ করেন। যার জন্য তারিণী ঘোষাল তাকে জেলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এদিকে রমার সঙ্গে রমেশের সম্পর্ক ভালো। কিন্তু রমার বাবা রমেশকে পরম শত্রু বলে মনে করেন। কিন্তু রমেশের বাবা মারা যাওয়ায় পিতার শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে রমেশ রমাকে ‘রাণী’ বলে সম্বোধন করে। তবে রমেশের বাবা তারিণী ঘোষাল ভালো ব্যক্তি ছিলেন । যা তাঁর ভাই দীনু প্রশংসার সুরে বলেছেন-তারিণী দাদা খাওয়াতে ভালোবাসতেন । তারিণীবাবু পল্লীসমাজকে খানিকটা হলেও আলোর পথ দেখিয়েছেন ।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত 'পল্লীসমাজ' উপন্যাসের অন্যতম খল চরিত্র হলো গোবিন্দ গাঙ্গুলি।