উত্তরঃ= সূচনা:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তজার্তিক সম্পর্ক ও রাজনীতির ব্যাপক পট পরিবর্তন হয়, তার কারণ স্বরূপ রাষ্ট্রবিদগণ মূলত ১৯৩০-এর দশকের বহুল প্রচলিত উদারবাদকে অনেকাংশে দায়ী করেছেন, তাঁরা মনে করেন ভার্সাই চুক্তির দ্বারা যুদ্ধে মূল যে শক্তি তাই প্রধানভাবে উপেক্ষিত হয়েছিল যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে। এই প্রেক্ষাপটে উদারবাদের বিপরীতে E.HKAR বাস্তববাদী ধারণাটি উপস্থাপন করেন। পরবর্তীকালে হ্যান্স মরগ্যান থাউ 'বাস্তববাদী' ধারণাকে নবরূপে সর্ব সমক্ষে উপস্থাপিত করেন, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনার অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হিসেবে পরিগণিত হয়।

বাস্তববাদী তত্ত্বের প্রবক্তা : 

১৯৩০-এর দশকে EHLKAR দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিভিন্ন রাষ্ট্রের পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বাস্তববাদী ধারণার উপস্থাপন করেন। পরবর্তীকালে মরগ্যান থাউ এই বাস্তবাদী ধারণাকে যুগোপযোগী সমাজে রাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে বিশদ ভাবে আলোচনা করেন। এছাড়াও জর্জহার্জ, কনেথ ওয়ালটজ, এফ সুম্যান, এন. স্পাইকম্যান প্রমুখ রাষ্ট্রবিদগণ পরবর্তীকালে এই তত্ত্ব সম্পর্কে বিশদ গবেষণা করেছেন।

মূলধারণা : 

মরগ্যান থাউ বাস্তববাদী ধারণার আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি সর্বপ্রথম আন্তজাতিক সম্পর্কের বিচার করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বা অবাস্তব বিষয়ের উপর নির্ভরশীল না হয়ে তার পরিবর্তে বিষয়ের উদ্দেশ্যের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি মনে করতেন-

1. আন্তজার্তিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পূর্বে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে সেগুলিকে একত্রিতকরণই একমাত্র আন্তজার্তিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব। এর ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে যে অন্তর্কলহ, দ্বন্দ্ব ক্রমাগত চলে আসছিল সেগুলির কিছুটা হলেও সমাধান করা সম্ভব হবে ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের পারস্পরিক ভারসাম্য সুরক্ষিত হবে।
2.ও তিনি আরও মনে করতেন মানুষের প্রকৃতির মধ্যে অনেক অযৌক্তিক উপাদান বর্তমান থাকে যা আন্তজার্তিক সম্পর্ককে অসম্পূর্ণরূপে তৈরী করে। ফলে পৃথিবীর সার্বিক উন্নতি করতে হলে সর্বপ্রথম ঐসকল অযৌক্তিক উপাদানগুলি নিয়েই কাজ করতে হবে। ঐ উপাদান ব্যতিরেকে পৃথিবীর সার্বিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভবপর নয়। তাই তিনি তাঁর নীতিতে 'Check and Balance নীতির উপর বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।

নীতিসমূহ : তবে মরগ্যান থাউ এর বাস্তববাদী নীতি ছয়টি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল-

বাস্তবনীতি: 

সমাজের মতো রাজনীতিও কতকগুলি বাস্তবনীতির দ্বারা পরিচালিত হয়। এই বাস্তবনীতি গুলির মূল উৎস হলো মানুষের সহজাত প্রকৃতি। তাই সমাজ হোক বা রাজনীতি তাঁর সার্বিক উন্নতি করতে হলে সর্বপ্রথম তার উন্নতির কারণ বা সমাজের রক্ষাকর্তা মানুষ ও তার প্রকৃতিকে অনুধাবন করতে হবে।
]

জাতীয় স্বার্থ : 

                       কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সেই রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের উপর নির্ভর করে। কারণ কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতি ও বৈদেশিক নীতি সেই রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের উপর নির্ভর করে। এমনকি রাষ্ট্র নায়কের উদ্দেশ্যেও জাতীয় স্বার্থের উপর নির্ভরশীল। জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে রাষ্ট্রনায়কের পক্ষে পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে অনুধাবন করা প্রায় অসম্ভব।

জাতির অস্তিত্ব রক্ষা :

জাতীয় স্বার্থের ধারণা পরিবর্তনশীল কারণ। কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কার্যাবলি ও বৈদেশিক নীতি একদিকে যেমন সেই রাষ্ট্রের জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সাথে যুক্ত তেমনি সেই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের সাথেও সর্বাঙ্গীন ভাবে যুক্ত। তিনি মনে করতেন কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ কোনো কারণবশত ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা যেমন জাতীয় স্বার্থকে বিঘ্নিত করে তেমন জাতির অস্তিত্বকেও নিরাপত্তাহীনতায় পর্যবসিত করে । 

নীতিবোধ উপর প্রাধান্যদান : 

বাস্তবাদী তত্ত্ব নীতিবোধের উপর  নির্ভরশীল। কিন্তু নীতিবোধের প্রবক্তাগণ মনে করেন কোনো নৈতিক মানদন্ডের দ্বারা রাষ্ট্রের কার্যাবলি, পররাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা সম্ভব নয়। কারণ রাষ্ট্রের কার্যাবলি পররাষ্ট্রনীতি সেই রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় চাহিদার উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়।

বিশ্বনিয়ন্ত্রণকারী নৈতিক বিধির সাথে অভিন্নতা :

মরগ্যান থাউ মনে করতেন- কোনো রাষ্ট্রের নৈতিক আশা-আকাঙ্খাকে বিশ্বনিয়ন্ত্রণকারী নৈতিক বিধির সাথে এক করে দেখা সম্ভব নয়। কারণ প্রত্যেক রাষ্ট্রই তার জাতীয়স্বার্থ এবং আশা-আকাঙ্খাকে বাস্তবে চরিতার্থ করার চেষ্টা করে কিন্তু তারা প্রায় প্রত্যেকেই তাদের কার্যাবলীকে সার্বজনীন নৈতিক উদ্দেশ্যের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে বেশি পছন্দ করে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রতা প্রদান : 

বাস্তববাদী তত্ত্ব রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার স্বতন্ত্রতা দাবী করে। যেমন- অর্থনীতিবিদ সম্পদ আইনবিদ আইন সম্পর্কে বিচার করে। তেমন বাস্তববাদী তত্ত্ব জাতীয় স্বার্থ। জাতীয় ক্ষমতা প্রভৃতি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বিচার করার চেষ্টা করে।

       সুতরাং পরিশেষে বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অন্তর্দেশীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যবর্তীকালীন অবস্থা যুদ্ধের চরম পরিণতি ঠান্ডা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যে বাস্তববাদী ধারণা বিকাশ লাভ করেছিল তা যুদ্ধের অবসানে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে আন্তজার্তিক সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কারণ বাস্তবাদের-Statism (রাষ্ট্রবাদ), Survival (জাতির অস্তিত্ব রক্ষা) ও National Interest (জাতীয় স্বার্থ)-এই তিন নীতির দ্বারাই বিশ্বরাজনীতির ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হয়। তাই মরগ্যান থাউ আন্তজার্তিক সম্পর্কের সাথে বিশ্বরাজনীতির সম্পর্ক নিরূপণ করতে গিয়ে তাঁর বাস্তববাদী তত্ত্বে বলেছেন- ...... 

The coreof International relations in International politices'