উত্তর :- আলোচ্য উদ্ধৃতিটি আশাপূর্ণাদেবীর রচিত ছোটগল্প ‘ইজ্জত' গল্পের।
এই উক্তিটি করেছিল বস্তিবাসী বাসন্তীর মেয়ে জয়ী। জয়ী ছিল অপূর্ব সুন্দরী। কিন্তু বস্তিতে থাকায় তার ইজ্জত রক্ষা হবে কিনা বাসন্তীর চিন্তা। বস্তি এলাকা নোংরা সেখানে অসামাজিক যুবকেরা থাকে ৷ বাসন্তীর মেয়ে সুন্দরী হওয়ায় তাকে দেখে বস্তির যুবকেরা নোংরা গান গায়, শিস্ দেয়, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে বিপথে যাওয়ার ও প্রলোভন দেখায়। তাই বাসন্তীভাবে তার মেয়ের ইজ্জত বস্তিতে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই বাসন্তী আশা করে তার পরিচিত সুমিত্রার বাড়ি যান। সেখানে তার মেয়েকে রক্ষা করবে সেই আশায় সুমিত্রা মানবিক অনুভূতিশীল নারী। সে এই অসহায় মেয়ের ইজ্জত রক্ষার জন্য রাজি হয়। কিন্তু তার স্বামী মহীতোষ বিরুদ্ধ প্রকৃতির মানুষ। সে সুমিত্রাকে বলে তাকে না জানিয়ে কেন জয়ীকে রাখার দায়িত্ব নেয়।
বস্তিবাসী জয়ীর ধারণা ছিল বস্তিতে বাজে ছেলেরা থাকে। সেখানে থাকা মানেই নারী মান মর্যাদা নেই। নারীদের সম্মান, শ্রদ্ধা বস্তিতে সম্ভব নয়। তাই সেভাবে সুমিত্রা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ঘরের হওয়ায় তাদের কাছে গেলে এই দায়িত্বটি রক্ষা করবে। কিন্তু মহীতোষ এই ব্যাপারেটি শুনে খুবই রেগে গেলেন। তার মত বস্তির মেয়েরা ছোটোলোক। তারা নোংরা তাদের আবার ইজ্জত কীসের? এইরূপ মন্তব্য করে এবং মহীতোষ তার স্ত্রীকে গঞ্জনা করে বলে তার এই কাজে সাহায্য করতে যাওয়া ঠিক ছিল না। তখন সুমিত্রা তার স্বামীর অসহায় কথাবার্তায় দুঃখ অনুভব করে। বাসন্তী যখন তার বাড়িতে যায় সুমিত্রার সঙ্গে দেখা করতে,তখন সে বলে তার সঙ্গে দেখা হবে না । তার খুব মাথা যন্ত্রণা । বাসন্তী তখন ব্যাকুল হৃদয় নিয়ে ফিরে যায়।
বাসন্তী বস্তিবাসী বলে তাকে ছোটোলোক ভাবে।
কিন্তু বাসন্তী বস্তিবাসী নয়। ভাগ্যের পরিহারে সে বস্তিতে উপস্থিত হয়। বাসন্তীর স্বামী ছিল। সু-স্বাস্থ্যবান। সাপের দংশনে সে মারা যান। তার স্বামী মারা যাবার পর শাশুড়ি তাকে কঠোর অত্যাচার করে তখন বাধ্য হয়ে বাসন্তী বস্তি এলাকা ভাড়া নেয় এবং তার ছোট মেয়েকে নিয়ে সেখানে থাকতে শুরু করে। ঘর ভাড়া ও সংসার চালানোর জন্য বাসন্তী লোকের বাড়িতে কাজ করতে থাকে। আস্তে আস্তে মেয়ে বড়ো যুবতী হয়ে ওঠে। তখন তার মনে হয় এরূপ বস্তিতে তার মেয়েকে রাখা উচিত নয়। তখন সে সুমিত্রার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে যায়।
‘ইজ্জত’গল্পের দ্বারা পরিলক্ষিত হয়। তথাকথিত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানুষেরা মানবিক কর্তব্যচূর্ণ, ভদ্রতার মুখোশ পরিহিত। এরা বস্তিবাসী যুবকদের থেকেও বেশি খারাপ। এই সব শিক্ষিত মানুষেরা বিপদাপন্ন মানুষদের সাহায্যের বদলে ছোটোলোক বলে ঘৃণা করে। তাই বাসন্তীর মেয়ে বলেছিল - “কার কত মুরোদ বোঝা গেছে” - এর মাধ্যমে সে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষের প্রতি ক্ষোভ উদ্রেগ করেছে।
0 Comments