উত্তর:- পল্লীসমাজ উপন্যাসের নায়িকা রমা ও নায়ক রমেশ অসাধারণ প্রতিভাধর দুই ব্যক্তিত্ব। বাল্যকাল থেকেই রমা ও রমেশের প্রেমের উন্মেষ। কিন্তু সমাজের টানাপোড়েন তাদের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে তারা পরস্পর থেকে বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এবং সমাজের কঠোর প্রথায় দলিত ও পিষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের চলার পথকে দৃঢ় করে তোলার সে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলে রমার সঙ্গে রমেশের প্রেমভাব জাগরিত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু পরিবর্তিত হয়েছে তাই আগেকার রূপে রমা বা রমেশকে দেখা যায় না। রমেশ দীর্ঘদিন ফিরে এসেছে হৃদয়ে নানারূপে বিরোধী ও প্রতিবাদী মনোভাব নিয়ে। অপরদিকে রমাও নিজেকে তৈরী করে ফেলেছে। কারণ রমেশ চলে যাবার পর রমাও বিবাহ করে।
কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে বিধবা হওয়ায় সে পিত্রালয়ে ফিরে আসে। তার পর বেণীর দুষ্কর্মের সহযোগী রূপে নিজেকে তুলে ধরে। রমা ও রমেশের এরূপ বৈশিষ্ট্যের কারণে পল্লীসমাজ অন্যরূপ লাভকরে। রমা ও রমেশ প্রেমের ভাবধারা অভিনব প্রকৃতির। তাই রমা রমেশকে ভালেবাসলেও তাকে বারং বারং আঘাত দিতে কুন্ঠিত বোধ করেনি। রমা রমেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায় রমেশের প্রতি রমার দৃষ্টি, সন্দেহ ও রমেশের শুভ কামনা করা। এরূপ বিষয়ের মাধ্যমে, রমা পল্লীসমাজের মেয়ে তাই তার মধ্যে জটিলতা থাকা স্বাভাবিক। রমা এক বিধবা নারী হওয়া সত্ত্বেও তার প্রতি ভালোবাসা সার্থকভাবে উপন্যাসে ব্যক্ত হয়েছে। রমা রমেশের সম্পর্কে আকর্ষণ বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব, অনুভূতি অন্তরের ভালোবাসা এবং বৈপরিত্য আচরণের জটিলতা প্রকাশ পায়।
এদিকে রমেশকে যে রমা ভালোবেসেছে তা কোন সংশয় নেই। কারণ, রমেশ হাজার আঘাত বাধাবিপত্তি সত্ত্বে রমাকে তার হৃদয়ে স্থান দিয়েছে। অপরদিকে বলা হয়েছে জমিদারির স্বার্থসিদ্ধি বাধা আর অপরদিকে রমেশেরপ্রতি তার আকর্ষণ তাকে দ্বৈত সত্ত্বার অধিকারী করে তুলেছে। রমেশ দীর্ঘ কারাবাসের পর যখন ফিরে আসে, তখন তার মধ্যে চরম ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে। কারণস্বরূপ বলা হয়েছে আবার লাঠিয়াল যখন রমেশের কাছে পরাজিত হয়, তখন তার মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে। তা থেকে বোঝা যায় তার মধ্যে গভীর ভালোবাসা আছে । তাই বলা হয়েছে রমা যখন বিধবা হয়ে পিতার গৃহে ফিরে আসে, তখন সে জমিদারের সহযোগীরূপে থাকে।
যার ফলে রমার কলঙ্ক গ্রামে ছড়িয়ে পরে। কিন্তু ঔপন্যাসিক শেষে রমা ও রমেশের মিলন ঘটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রমা তার জীবনে পরিবর্তন ঘটিয়ে ছিল কলঙ্ক নিয়ে। আর রমেশ পরিবর্তন ঘটিয়ে ছিল সমাজনেতারূপে। যার ফলে রমা আর রমেশের সঙ্গে মিলিত হতে চাননি। কিন্তু রমা প্রেমের অর্ঘ হিসেবে রমেশের হাতে সন্তানতুল্য অনুজকে তুলে দিয়েছে। পরিশেষে বলা যায় রমা ও রমেশের বিবাহ দিয়ে লেখক শেষ করতে পারতেন। কিন্তু লেখক তা করেননি কারণ তাতে শিল্পীর কাজ ব্যাহত হত। তাই রমা ও রমেশের ভালোবাসার ব্যর্থতার মাধ্যমে পল্লীসমাজের রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন।
0 Comments