সারসংক্ষেপ : আশাপূর্ণাদেবীর লেখা 'ইজ্জত' গল্পটি অসাধারণ। আশাপূর্ণাদেবী পুরুষাশিত সমাজের রূপ ও নিম্নবৃত্ত মানুষের জীবনরীতি আলোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ কীভাবে নিম্নবিত্ত মানুষদের অবহেলিত, ঘৃনিত করে তার রূপটি। আলোচ্য গল্পে মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষিত মহিলা সুমিত্রা, তার স্বামী মহীতোষ। অপরদিকে নিম্নবিত্ত ঘরের মহিলা বাসন্তী ও তার মেয়ে জয়ীর কথা আলোচনা করা হয়েছে।
আশাপূর্ণাদেবীর রচিত 'ইজ্জত' গল্পে উল্লেখযোগ্য নারী চরিত্রটি হল বাসন্তী। সে এক অভাগা নারী। অদৃষ্টের জন্য সে লোকের বাড়িতে কাজ করে দিন যাপন করছিল। স্বামী সাপের কামড়ে মারা যাবার জন্য তার শাশুড়ি তাকে দায়ী করে। যার জন্য তাকে নানারকম গঞ্জনা শুনতে হয় । এই সে শান্তি ফিরে পেতে লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালাবে তাই সিদ্ধান্ত নেয়। সেইসময় বাসন্তীর মেয়ে জয়ী ছিল খুব ছোটো । ততদিন তার কাছে রাখতে তার কোন অসুবিধা হয়নি।
চারমাসে কাজের সুবাদে সুমিত্রা বুঝেছিল বাসন্তী ভদ্র ও পরিষ্কার। তাই তার মেয়ে যখন বড়ো হয়ে ওঠে তখন তার মেয়ে সুমিত্রার কাছে রাখার প্রস্তাব দেয়। তাছাড়া বাসন্তী খেটে খাওয়া মানুষ হওয়ায় রাতে তার মেয়েকে কেউ রাখলে তার মেয়ের ইজ্জত রক্ষা হয়। এই ভেবে পরিচিত ও অপরিচিত সকলের কাছে নিজে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বাসন্তী বস্তিবাসী বলে তার মেয়েকে রাখার দায়িত্ব কেউ নেয় না। তখন বাসন্তীর সমাজের কাছে দায় প্রার্থনা করেছে। কিন্তু সমাজের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব এইরূপ আচারণ মেনে নিতে পারেনি জয়ী। তখন বিরক্তি এবং ঘৃণায় উপরিউক্ত কথাগুলি ব্যক্ত করে ।
বাসন্তীর স্বামী ছিল সুন্দর চেহারার মানুষ। তেমনি তার মেয়েও অপরূপ সুন্দরী ছিল। কিন্তু বস্তি এলাকায় এরূপ অপরূপ সুন্দরী মেয়ে থাকা বিপদজ্জনক। কারণ বস্তি এলাকার যুবকেরা তার মেয়েকে শিস্ দিতে, নোংরা ব্যবহার, অভদ্র কথা বলত। তাতে বাসন্তী ভাবত তার মেয়ের ইজ্জত রক্ষা বস্তিতে সম্ভব নয়। বাসন্তী গরিব হলেও সৎ, নম্র, আদর্শবান ছিল। তার মেয়েও সেরূপ।
মেয়েকে নিয়ে বাসন্তীর চিন্তা ক্রমশ বেড়েই চলত। বাসন্তী যে কাজটি পেয়েছিল পরে, তা হল এক বুড়িকে দেখাশোনা করতে হবে। তার জন্য তার মেয়েকে রাতে কোথায় রেখে যাবে এনিয়ে সমস্যা। আর বাসন্তীর মেয়েকে রাতে কেউ রাখতে রাজি হয়নি। কারণ তাদেরকে ছোটোলোক বলে সম্বোধন করা হয়। বাসন্তীর মেয়ে জয়ী বলে ‘আমরা যখন ছোটোলোক তখন ছোটোলোকের মতই ব্যবস্থা হোক' - খারাপ হতে হলে খারাপই হব। কিন্তু তার মেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এরূপ মনোভাব করলেও সে করেনি। কারণ বাসন্তী ভেবেছে, খারাপের দাগ লাগলে তা নির্মূল করা সম্ভব নয় ৷
লেখিকা আশাপূর্ণাদেবী 'ইজ্জত' গল্পের মাধ্যমে বাসন্তীর আদর্শময়ী চরিত্রটি তুলে ধরেছেন। বাসন্তী যেহেতু মা, ভাগ্যের পরিহাসে তাকে এই জায়গায় উপস্থিত হতে হয়। তাই শত অভাব অনটনেও মেয়ের ইজ্জত রক্ষার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে এবং সুমিত্রা যখন তার মেয়েকে রাখতে রাজী হয় তখন সে সুমিত্রাকে ‘সাক্ষাৎ ভগবতী’ বলে অভিহিত করে। কিন্তু সুমিত্রার স্বামী বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। জয়ীকে কোথাও রাখার ব্যবস্থা করতে পারে না। তখন বাসন্তী হতাশা, দুঃখ, কষ্টে কেঁদে ওঠে। সেভাবে শত চেষ্টা করেও সমাজের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার পরিবর্তে যে মেয়ের ইজ্জত রক্ষায় ব্যর্থ হয়।
বাসন্তীর মেয়ে জয়ী পরমাসুন্দরী। তাই তার মেয়েকে বস্তি এলাকা থেকে রক্ষার দায়িত্বের জন্য সমস্যায় পড়েছে। তাই সুমিত্রার কাছে। যখন বাসন্তী ব্যর্থ হন তখন সে বলে, গরিব হই, বাসন মেজে খাই, তবু মেয়েছেলের একটা ইজ্জত আছে তো? ওর ইজ্জতটা রক্ষার দায় আপনার | গিয়ে এক্ষেত্রে বলা যায়, বাসন্তী বাড়িঘর হারা নিঃস্ব দরিদ্র কিন্তু সৎ চরিত্রবান। তার কাছে ইজ্জতের মূল্য অপরিসীম। বাসন্তীর মেয়ে জয়ী তার বাবার মতো হয়েছে অপরূপ সুন্দরী। মেয়েটিকে
দেখে লোকে অনেক বিরূপ কথা ব্যক্ত করে। আলোচ্য গল্পে জয়ীর ইজ্জত রক্ষার কথাই বলা হয়েছে।
জয়ী অপরূপ সুন্দরী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সুমিত্রার কাছে যখন মেয়েটিকে রাখতে যায় তখন সুমিত্রা জয়ীর সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারে শুধু রূপসীই নয় ভদ্র ও নম্র প্রকৃতির। অর্থাৎ মেয়েটি রূপসীই নয়, মুখের চেহারায় বেশ একটা ভদ্র মার্জিত শ্রী। কিন্তু সুমিত্রার স্বামী মহীতোষের জন্য জয়ীকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি। বাসন্তী আবার তার মনিবের বাড়িতেও তাকে রাখার জন্য অনুরোধ করে কিন্তু তারাও তাকে রাখেনি। বাসন্তীর কাল হয়ে দাঁড়ায় তার রূপসী সুন্দরী মেয়ে। তাছাড়া বস্তি এলাকায় থাকায় আরও দুশ্চিন্তার কারণ হয়। আবার জয়ীর অপরূপতা দেখে কেউকে বলে - ‘বাবুদের মেয়ে - চুরি করে নে এসেছিস।' বাইরে বেরানো মাত্রই নানা ইঙ্গিত জয়ীকে শুনতে হয়। যেমন - কলে জল আনতে যাওয়ার সময় বস্তির ছেলেরা তাকে দেখে শিস্ দেয়, গান করে, ইচ্ছে করে তার গায়ে ধাক্কা দেয়।
এইভাবে তার ওপর নানা অত্যাচার চালায়। এসব কারণে বাসন্তী তার মেয়েকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু শিক্ষিত সমাজের কেউই তার মেয়ের ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ব নেয়নি। মেয়েটির অসহায় অবস্থা দেখে সুমিত্রা কেঁদে ওঠে ও তাকে রক্ষা করতে না পারায় ব্যর্থতা বোধ করে। সুমিত্রার স্বামী মহীতোষের জন্য বাসন্তীর মেয়েকে আশ্রয় দিতে পারেনি। মহীতোষের মন্তব্য বস্তিবাসীরা ছোটোলোক তারা নিম্নবিত্ত। তাই তারা যেকোনো সময়ে বিপদে ফেলতে পারে। এইরূপ বলে তাদেরকে উপহাস করেছে বাসন্তীকে মহীতোষ ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি তাকে ৷ অপমান করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। তখন বাসন্তীর মেয়ে জয়ী প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। সে বলে - ‘কার কত মুরোদ বোঝা গেছে।' গরিব মানুষের ইজ্জত বড়লোক বাবুদের কাছে নেই। তখন সে বলে-'আমরা যখন ছোটোলোক তখন ছোটোলোকে তখন ছোটো লোকের মতই ব্যবস্থা হোক, মন্দ হতে হয় তো মন্দই হব।'
'ইজ্জত' গল্পে বাসন্তীর মেয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তার মেয়ে ভদ্র, নম্র ও চরিত্রবান। তাই তার মাকে যেরূপ অপমানিত হতে হয় তার জন্য সে প্রতিবাদ করে তোলে। বাবুদের কথায়, ছোটোলোক ঘরের মেয়েদের ইজ্জতের দাম নেই। তাই তাদের ইজ্জত রক্ষার দায়িত্ব কেউ নেয়নি। এরূপ প্রেক্ষিতে বাসন্তীর মেয়ে বলে ধনী ব্যক্তির বাড়ির কৃপা প্রার্থনা করে ইজ্জত নষ্ট করার চেয়ে চারিত্রিক শুচিত নষ্ট হওয়া ঢের মর্যাদাকর। পরিশেষে বলা হয়েছে ‘ইজ্জত’গল্পে বাসন্তীর মেয়ের প্রতিবাদী মনোভাব স্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠে।
সুমিত্রার স্বামী মহীতোষ মধ্যবিত্ত পরিবারের পুরুষ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা মহীতোষ। মধ্যবিত্ত সমাজের সবচেয়ে বড়ো গর্ব তার মানসম্মান। মধ্যবিত্ত জীবনচর্চার বাইরে মুক্ত মন দিয়ে মানবিকতার কারণে সে কোনো বিরূপ পদক্ষেপ করতে পারে না। মধ্যবিত্ত সংস্কার তার মনকে মর্যাদার অসার আবরণে আবদ্ধ ও সংকুচিত করে রেখেছে। অপরদিকে, তার স্ত্রী সুমিত্রা মুক্তমনা ও সংবেদনশীল অনুভূতি সম্পূর্ণা এক নারী। সে নারীর সহজাত স্নেহবাসল্য ও সহানুভূতির অধিকারী। এই গল্পে বস্তিবাসী বাসন্তী তার মেয়ে জয়ীর ইজ্জত রক্ষার জন্য সুমিত্রার বাড়ি আসে। বস্তির অসামাজিক ছেলেরা তার মেয়ের পিছনে লাগে। কারণ, তার মেয়ে পরমাসুন্দরী যুবতী। আবার বস্তির কিছু ব্যক্তিরা তার মেয়েকে বিপথে যাওয়ার প্রলোভনও দেখায়। সুমিত্রার বাড়িতে কাজের সুবাদে বাসন্তীর পরিচয় হয়। তাই বাসন্তী জানে সুমিত্রা ভদ্র, নম্র ও সম্পন্ন এক নারী। তাই সে বস্তির উৎপীড়ন থেকে মেয়ের ইজ্জত রক্ষার জন্য ব্যাকুল চিত্তে সুমিত্রার বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য প্রস্তাব জানায়। সুমিত্রা বাসন্তীর এই রূপ কথা শুনে তার প্রস্তাবে সম্মতি জানায় । মানবিকতা পরবর্তীকালে সুমিত্রার স্বামী মহীতোষ যখন সমস্ত কথা শুনে, তখন খুবই ক্রুদ্ধ হয়ে যান। তখন সে স্ত্রীকে সাবধান করে দিয়ে বলে নিজের ওজন না বুঝে কাউকে কোনো ব্যাপারে কথা দেওয়া উচিত নয়।
হিন্দু সমাজে যেহেতু পুরুষই কর্তা তাই তার আদেশ ও অনুমতি নিয়ে কাজ করা উচিত। পরিবারে স্ত্রীর থেকে স্বামীর আধিপত্য বেশী। স্বামীর মতামত না নিয়ে কোনো কিছু করতে পারে না। নারীদের সেই ক্ষমতা থাকে না। যে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ বিচার করা। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র পুরুষরাই জ্ঞানবুদ্ধির অধিকারি। স্ত্রীর স্বাধীন ইচ্ছা, মতামত, আত্মস্বাধীনতা ও মর্যাদাবোধ মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্বীকৃতি লাভ করতে পারে না। তাই মহীতোষেরও ক্ষেত্রে এরূপ অবস্থা হয়েছে। মহীতোষ মানতে চাই না পরিবারের বাইরে নারীর মানবিক অনুভূতিবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ আছে ।
বাসন্তীর মেয়েকে তার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থার কথা বললে মহীতোষের মনে নানা সন্দেহের আবির্ভাব হয়। তার ধারণা বস্তির এলাকার মানুষেরা ভালো নয়। তাদের আবার ইজ্জত কিছু আছে। তারা তো ছোটোলোক। সেখানকার ছেলেরা তো নোংরা ভাষা, নোংরা গালিগালাজ, চিৎকার চেঁচামেচি করবেই। তাই বাসন্তীকে নিয়ে মহীতোষ ভাবে তার কোনো বদ মতলব থাকতে পারে কারণ, এইসব ঘরের মেয়েরা কোনোরূপ কারণ দেখিয়ে অর্থ আদায় করে তাই বাসন্তীকে মহীতোষ বলে তার মেয়েকে রাখার দায়িত্ব নিতে পারবে না । এতে সুমিত্রা গভীর আর্তবেদনায় বিপর্যস্ত হয়। মহীতোষ অহংকারী, দাম্ভিক পুরুষ। তাই সে স্ত্রী কাছেও নিজের আধিপত্য খোয়াতে চান না। স্বামীর ঔদ্ধত্য অহংকারে সুমিত্রা খুব ছোটো হয়ে যায় বাসন্তীর কাছে। এখানেও সুমিত্রার ইজ্জত পুরুষের কাছে ব্যর্থ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধি মহীতোষ । সে কেবল মনে করে নারী মানে স্বামীর আজ্ঞাবহ। এর নিজের কোনো স্বাধীন মনোভাব, চিন্তাধারা বিচার বোধ নেই ।
ইজ্জত গল্পের আরেকটি প্রধান চরিত্র হলো সুমিত্রা। সুমিত্রা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের গৃহবধূ। লেখিকার সুমিত্রার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে পুরুষাশিত মধ্যবিত্ত সমাজে নারীর অবস্থান সম্বন্ধে দৃষ্টি দিয়েছেন। শিক্ষিত পরিবারের গৃহবধূ সুমিত্রা। তার হৃদয়ে ছিল মানবিকতা। তাই বস্তির ছোটোলোকের মেয়ে জেনেও সুমিত্রা বাসন্তীর মেয়েকে রাখতে রাজি হয়। বাসন্তী চারমাস আগে কাজের সুবাদে সুমিত্রার সঙ্গে পরিচয় করে। তার আচার ব্যবহার দেখে তাকে ভালো মানুষ বলে মনে হয়েছিল। তাই তার বাড়িতে গিয়েছিল তার মেয়ের আশ্রয়ের জন্য। বাসন্তী তার মেয়েকে সুমিত্রার বাড়ি নিয়ে যাওয়ায় সে দেখে যে তার মেয়ে নম্র ও ভদ্র । কিন্তু কেউ আশ্রয় দেয়নি তার মেয়েকে আগুনের খাপ্পা ভেবে। এই কথা সুমিত্ৰা ভাবে ।
সুমিত্রা সৌন্দর্যের পূজারি। তাই তার মেয়েকে দেখে সে সাজিয়ে গুজিয়ে সুন্দর করে রাখবে বলে ভেবে নেয়। তার নিজের লালফুলের পেঁজা জর্জেট বা নীল রং-এর শাড়ি বা ন্যাতানো ছাপা শাড়ি তাকে পড়িয়ে রাখবে। জয়ীর মতো সুন্দরী মেয়ে বস্তিতে পরে আছে ভেবে সুমিত্রার খুব মায়া জাগে। আবার সুমিত্রা এও ভাবে সুন্দরী মেয়েকে সাজালে সে আরও সুন্দরী হয়ে ওঠবে। তাতে আরও বিপদ ঘটতে পারে। সুমিত্রা সমাজ ও নিজের পরিবারের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন নয়। তাও সে কথা দেয় তার মেয়েকে রাখবে। কিন্তু এই বলে, দাদাবাবু আসলে তাকে জিজ্ঞাসা করা না পর্যন্ত আমি সম্পূর্ণ কথা দিতে পারবো না। এই সুন্দরী মেয়ে বস্তিতে থাকলে, বস্তির ছেলেরা তার ইজ্জত লুণ্ঠন করার চেষ্টা করবে। এতে সুমিত্রার মানসিকতায় একটি আঘাত লাগে ৷ সে ভাবে একটু চেষ্টা করলে হয়তো ঐ সুন্দরী মেয়েটাকে সাপের গ্রাস থেকে বাঁচানো যাবে। সুমিত্রা বাসন্তীকে একা হলেও আশ্বস্তি করে। তাই বাসন্তী সুমিত্রাকে ‘সাক্ষাৎ ভগবতী' বলে অভিহিত করে। সুমিত্রা তার স্বামীকে না জেনে কথা দেওয়ায় তাদের দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়ে যায়। সুমিত্রা তার স্বামীকে বোঝায় যে, “মেয়েটাকে নেকড়ের মুখে ফেলতে পারবে না।” জগতে এরকম অনেক ঘটনায় ঘটছে। কিন্তু বাসন্তী । জন্য এসেছে তাই তাকে সাহায্য করাটাই উচিত। যেহেতু সাহায্যে
কিন্তু মহীতোষ এই ব্যাপারটাকে সোজাভাবে ভাবতে পারেনি। সে ভেবে ছিল বস্তির ছোটোলোক মেয়ে তাদের উপর কলঙ্ক চাপিয়ে টাকা আদায় করবে। আবার বলে বাসন্তীর মেয়েকে যখন একা রাখতে অসুবিধা তখন তার কাজে বেরানোর দরকার কী? একটা ঝিয়ের মেয়ের বিয়ের জন্য কতটাকাই বা দরকার, যে টাকার জন্য কাজ করতে হবে। বাসন্তী গরীব হওয়ায় গরীবের প্রতি যে এত অবজ্ঞা সুমিত্রা তা অসহ্য বলে মনে করে। সুমিত্রা তার স্বামীকে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়ে না। সে বলে, বাসুনমাজা ঝিয়ের কাছে সংসারে কোনো ক্ষমতাই তার নেই। এই উক্তির মাধ্যমে মহীতোষকে অবহেলার কথা বোঝায় সুমিত্রা বলে বাসন্তী যদি বস্তিতে ভালোকরে খোঁজ করে, তাহলে দেখতে পাবে বস্তির মধ্যে মহীতোষের চেয়ে অনেক ভালো লোক আছে। তাদের অনেক বেশী মনুষ্যত্ব আছে। সুমিত্রা বাসন্তীর মেয়েকে রাখার জন্য যে অপমানিত হয়েছিল তাতে সে বুঝতে পেরেছিল পায়ের নীচে শক্তমাটি তার নেই। তার নিজস্ব স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই। পুরুষাশিত সমাজে পুরুষের হাতেই সব ক্ষমতা অর্পিত হয়।
সুমিত্রা বাসন্তীকে কথা দিয়েও কথার খেলাপ করায় সে মনের দিক থেকে আঘাত পায়। সে নিজেকে মনে করে মধ্যবিত্ত সংসারের পরাধীনতার নাগপাশে বন্দিনী এক নারী। এই পুরুষাশিত সমাজে নারীরা কিভাবে লাঞ্ছিত হয় তা সুমিত্রার চরিত্রের মধ্যদিয়ে ফুটে উঠে।
0 Comments