চতুর্থ সেমেস্টার
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
মান-2

প্রশ্ন :- গুরুকুল শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো ?

উত্তর: গুরুকুল : 

      প্রাচীন ভারতে শিক্ষা প্রক্রিয়া গুরুগৃহেই সম্পন্ন হতো। গুরু-শিষ্যের আন্তরিক সম্পর্কের মাধ্যমে যে আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল, তা-ই হলো প্রাচীন ভারতীয় গুরুকুল। গুরুকুলে শিক্ষা ব্যবস্থা ও আহার ছিল অবৈতনিক। তার জন্য শিক্ষার্থীকে কোনো অর্থ দিতে হতো না। তবে শিষ্যের কায়িক শ্রম ছিল আবশ্যিক কর্তব্য। গুরুগৃহে শিষ্যরা পারিবারিক জীবনের স্নেহ ও মমতা থেকে বঞ্চিত হতো না।

         জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি শিষ্যকে গুরুগৃহে যে সমস্ত কর্ম সম্পন্ন করতে হতো তা হলো যজ্ঞাগ্নি সংরক্ষণ, গোচারণ, গুরুসেবা ইত্যাদি। সাধারণত গুরুকুলের খরচ চলত রাজাদের অর্থানুকূল্যে। এই উদ্দেশ্যে রাজা আচার্যদের কয়েকটি গ্রাম দান করতেন। এই গ্রামগুলিকে বলা হতো অগ্রহার।

প্রশ্ন :- বৈদিক যুগের শিক্ষার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর: শিক্ষার বৈশিষ্ট্য : 

ঋক্‌বৈদিক যুগে পাঠ্যক্রম ছিল শুধুমাত্র বেদাধ্যয়ন। বেদ এর

সঠিক আকৃতি (কারণ বৈদিক মন্ত্র সুর করেই পড়তে হতো) ও তার সঠিক অর্থ জানায় ছিল বেদ অধ্যয়নের মূল লক্ষ্য। উদাও, অনুদাও, স্মরিত, ছন্দ, মাত্রা, যতি সহযোগে কিভাবে একটি মন্ত্র পাঠ করা হয় তাই শেখাই ছিল শিক্ষার্থীদের মূল শিক্ষণীয় বিষয় । মন্ত্রের সঠিক অর্থ অনুধাবন করা।অর্থাৎ বৈদিক যুগে শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল- সঠিক উচ্চারণের উপর জোড় দেওয়া।

প্রশ্ন) বৈদিকযুগের দুজন বিখ্যাত বিদুষী মহিলার নাম লেখো।

 উত্তর: বৈদিকযুগের দুজন বিখ্যাত বিদুষী মহিলা হলেন- অপালা ও গার্গী।

প্রশ্ন) উপসম্পদা বলতে কী বোঝো?

উত্তর: উপসম্পদা : সংঘ প্রবেশের পর ভিক্ষুককে কয়েকটি স্তর অতিক্রম করে তাকে উপসম্পদা লাভ করতে হতো। প্রথমে তাকে একটা উপধ্যায় নির্বাচন করতে হতো সেই উপধ্যায় তাকে কিছু প্রশ্ন করত। যেমন- 

১। ছাত্রটির প্রকৃতি কিরূপ ?

 ২। সে রোগাক্রান্ত কিনা? 

৩। সে বাবা মায়ের অনুমতি নিয়েছে কিনা? 

৪। তার নাম ও গ্রহণের বাবর নাম কি? 

৫। তার কুড়ি বছর হয়েছে কিনা ? 

এই সব প্রশ্ন করার পর উপসম্পদা স্থির করা হতো অবশেষে উপসম্পদা

  

প্রশ্ন: বৌদ্ধযুগের গুরু-শিষ্যের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল ?

উত্তর :- গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক : গুরু শিষ্য সম্পর্ক পিতা ও পুত্রের মতো ছিল। গুরু
শিষ্যের আচরণের প্রতি যেমন নজর রাখতেন তেমন শিক্ষার্থীরাও উপাধ্যায়ের প্রতি
তিনটি কর্তব্য ছিল। 

১। শিষ্যের নিজের কাজ করা।
২। গুরুর কাজ করা।
৩। সংঘের কাজ করা।

প্রশ্ন) বৌদ্ধযুগের শিক্ষার দুটি সমালোচনা লেখো।

উত্তর : ১। বৌদ্ধদের ধর্ম ও জীবনে সংঘের প্রভাব ছিল অপরিসীম। অভিজাতদের দান করা অর্থ তাদের জীবন চলত নিজেদের সম্পত্তি বলতে কিছু ছিল না ফলে পরবর্তীকালে কোনো অনুষ্ঠানের জন্য অভিজাতদের উপর নির্ভরশীল হতে হয়।
২। গৌতমবুদ্ধ স্ত্রীলোককেই মানবজীবনের দুঃখের কারণ বলে মনে করতেন।
তাই স্ত্রীশিক্ষার বিস্তারে তিনি কোনো আগ্রহ দেখান নি।

প্রশ্ন :- টোল কী?

উত্তর : প্রাচীনকালে শিক্ষা যখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, সেসময় থেকেই দেশের ও মাদ্রাসার উদ্ভব। টোল ছিল হিন্দুদের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান এবং মাদ্রাসায় মুসলিমদের
বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠতে থাকে। প্রাচীনকালে হিন্দুদের শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে টোল ও পাঠশালা এবং মধ্যযুগে মুসলমানদের শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে মক্তব
উচ্চশিক্ষা দেওয়া হতো।

প্রশ্ন:- টীকা লেখো-আকবরের শিক্ষানীতি।

উত্তর: আকবরের শিক্ষানীতি :

১। সহজ পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে হবে।
২। লেখার আগে অক্ষরজ্ঞান করাতে হবে।
৩। অক্ষর শেখানোর পর পঠনপাঠনের উপর জোড় দিতে হবে।
৪। শব্দের অর্থ না বুঝিয়ে মুখস্থ করা যাবে না ।
৫। পূর্ববর্তী জ্ঞানের পুনরায় পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। মুখস্থ পদ্ধতি বর্জন করতে হবে।

প্রশ্ন) শ্রীরামপুর ত্রয়ী কারা ?

উত্তর:

ডিনার উইলিয়াম কেরি, জন ম্যার্শম্যান ও উইলিয়ম ওয়ার্ড এই তিনজনকে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলে।

প্রশ্ন : চার্লস গ্রান্টের সুপারিশ লেখো।

উত্তর: মিশনারীদের কার্যকলাপে কোম্পানির কাজে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় ১৭৯৫ সালে কোম্পানি চার্লস গ্রান্টকে দায়িত্বদেন। ১৭৯৫ খ্রিঃ তিনি একটি প্রস্তাব পেশ করেন সেখানে তিনি ১। ভারতীয় অধঃ পতনের জন্য দেশীয় শিক্ষাকে দায়ী করেন। ২। ইংরেজী শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেন।

প্রশ্ন : লর্ড হার্ডিঞ্জের মতবাদ লেখো।

উত্তর:

১৮৩৫ সালে লর্ড বেন্টিঙ্কের পর ভারতীয় বোর্ড কন্ট্রোলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন লর্ড হার্ডিঞ্জ তিনি ১৮৪৪ খ্রিঃ বলেন-সরকারী কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ইংরেজী শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এটি হার্ডিঞ্জের মতবাদ নামে পরিচিত।

প্রশ্ন:- মেকলে মিনেটের দুটি সুপারিশ লেখো।

উত্তর: মেকলে তাঁর সুবিখ্যাত মেকলে মিনিটের (Minute) জন্য সমভাবে নিন্দিত ও প্রশংসিত হয়েছেন। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য মত দেওয়ায় অনেকে তাঁকে “অগ্রগতির পথে আলোকবর্তিকাবাহী” বলে অভিহিত করেছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর দুটি সুপারিশ হলো- 

        প্রথমত, ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে এদেশের জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটানো

সম্ভব। তাই পাশ্চাত্য শিক্ষার ছোঁয়ায় ভারতীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও জাতীয়তাবাদী মনোভাব সঞ্চারিত হয়েছিল, আর এই প্রেক্ষিতে কেউ কেউ মনে করেন যে মেকলে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

        দ্বিতীয়ত, সার্বিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে মুষ্টিমেয়ের শিক্ষার মাধ্যমে চুঁইয়ে পড়া নীতি' মেনে তিনি দেশকে শিক্ষিত করার এক ভ্রান্ত পরিকল্পনা করেছিলেন।

প্রশ্ন:- ডেসপ্যাচ সম্পর্কে লেখো।

উত্তর:- উডের ডেসপ্যাচের সুপারিশগুলি হলো :

শিক্ষাবিভাগ প্রতিষ্ঠা : কোম্পানি তখন বাংলা, মাদ্রাস ও বোম্বে প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছিল। তাই এই তিনটি জায়গায় শিক্ষাবিভাগ প্রতিষ্ঠা করার একেই আর্যসত্য বলে।

প্রশ্ন) দীন-ই-ইলাহি কী?

উত্তর:

মোঘল সম্রাট আকবর ১৫৮২ খ্রিঃ এক নতুন ধর্মমত চালু করেন। একেই দীন-ই- ইলাহি বলে। এটি ছিল হিন্দু ও মুসলিম রীতিনীতি ও সংস্কৃতির সম্মেলনে তৈরী নতুন ধর্মমত।

প্রশ্ন) এ কে কবে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ করে?

উত্তর:

১৮৫৪ সালে চার্লস উড বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ করে।

প্রশ্ন) জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কে কবে চালু করেন ?

উত্তর: 

১৯০৫ সালে ডন সোসাইটির উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে উঠে।

প্রশ্ন) প্রবা কী?

উত্তর:

ত্রিপিটক গ্রন্থে বৌদ্ধসংহে প্রবেশের নিয়মাবলির প্রথমেই বলা হয়েছে যে শিক্ষার্থীকে ভিক্ষুধর্মে দীক্ষিত হতে হবে ও প্রবা অবলম্বন করতে হবে। প্রজ্ঞা হলো ভিক্ষুকের সংকল্প গ্রহণের পরিচায়ক। তবে প্রবজ্ঞা গ্রহণ যে কেউ করতে পারে না। যেমন- নরঘাতক, দস্যু, সংক্রামক রোগগ্রস্থ ব্যক্তি প্রভৃতি। আবার প্রবঙ্গা গ্রহণ করেও কেউ যদি গুরুতর অপরাধ করে তবে যে ভিক্ষু হতে পারে না।

প্রশ্ন) মুদালিয়র কমিশন প্রস্তাবিত 'সপ্তপ্রবাহ' কী?

উত্তর:

শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের রুচি ও প্রবণতার ভিত্তিতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় সেজন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন ও মুদালিয়র কমিশন যে ধরনের বিদ্যালয় স্থাপনে সুপারিশ করেছে তাকে বলা হয় বহুমুখী বিদ্যালয়।

• মুদালিয়র কমিশনের সাতটি প্রবাহ : 

কমিশন বিভিন্ন বিষয়কে ৭টি গ্রুপে ভাগ করেছে। যথা-

1. মানবীয় বিদ্যা  2. বিজ্ঞান 3. কারিগরিবিদ্যা 4. কৃষি  5. চারুকলা  6. গার্হস্থ্যবিজ্ঞান

প্রশ্ন) বুনিয়াদি শিক্ষা কাকে বলে?

উত্তর:- জাকির হোসেন কমিটির উদ্দেশ্য ছিল নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি খসড় পাঠক্রম নির্ধারণ করা। কিন্তু কমিটি তাদের রিপোর্টে সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনাটির ব্যাখ্য দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি পাঠক্রমও প্রস্তাব করে। 1937 সালের ডিসেম্বর মাসে কমিটি তাদের রিপোর্ট গান্ধিজির কাছে পেশ করে। গান্ধিজির প্রস্তাব অনুযায়ী এই নতুন যে শিক্ষা-পরিকল্পনার রূপরেখা পেশ করা হয়, তাকে বলা হয় বুনিয়াদি শিক্ষ কথা বলেন। যার কাজ হলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাদান সম্পর্কে পরামর্শ দান করা। হয়েছে কারণ এই শিক্ষাই হবে ভবিষ্যৎ জীবনগঠনের ভিত্তিভূমি। এই বুনিয়াদ বা ভিত্তির উপর গড়ে উঠবে শিক্ষার্থীর পূর্ণ বিকশিত জীবনের সফলতার ইমারত। বুনিয়াদি শিক্ষাদর্শনের মূলকথা হলো- পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে সহযোগিতার ভিত্তিতে সমাজের পুনর্গঠনের কাজে অগ্রসর হতে হবে।