উত্তর:- ভূমিকা :

      আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠক-পাঠিকা থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত সকলের নিকট বিশ্বায়ন বা Globalisation কথাটি বিশেষভাবে পরিচিত। বিগত প্রায় এক দশকের অধিককাল ধরে ভারতের নানা স্থানে শিক্ষ প্রতিষ্ঠানে, শিল্প প্রতিষ্ঠানে, শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থায় বিশ্বায়নের উপর নান আলোচনা সভা বা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সমস্ত উদ্যোগ থেকে এটা প্রমাণিত যে এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও রুজি-রোজগার নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। সেই কারণে নানা শ্রেণির মানুষ বিশ্বায়ন সম্পর্কে এত বেশি আগ্রহী বিশ্বায়নকে কেন্দ্র করে উত্তর ও দক্ষিণের দেশগুলির মধ্যে শুরু হয়ে গেছে অনেক ধরনের টানাপোড়েনে যার সঙ্গে অতীতের স্নায়ুযুদ্ধের সংগতভাবে তুলনা কর চলে।

সংজ্ঞা : বিশ্বায়ন হলো একটি প্রক্রিয়া, যার সাহায্যে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংস্থা ব এজেন্সি বিশ্বজুড়ে নিজেদের মধ্যে নানা প্রকার সম্পর্ক গড়ে তোলে।

বেশিরভাগ বিশ্লেষক বিশ্বায়ন ধারণাটিকে অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মনে করে এর অনুপুঙ্খ আলোচনা করেন এবং আমরা মনে করি এই প্রবণতা একেবারে অযৌক্তিক নয়। কারণ সাম্প্রতিক কালে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির আমজনতা ও শিক্ষিত মহল বিশ্বায়নকে তাই উৎপাদন এবং মূলধনের আন্তঃরাষ্ট্রীয়করণ বলে গণ করার প্রবণতাবিশেষভাবে লক্ষকরা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে এই আন্তঃরাষ্ট্রীয়করণকে বৈধ করে তোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অন্য একটি সংজ্ঞায় বিশ্বায়নকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।বলাহয়েছে বিশ্বায়নহলোবাজারচালিত একটি প্রক্রিয়া,যারবহিষ্কারকেস্বাগত জানায় অথবা বাধা দেয়। কিন্তু পরিবর্ত্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় ক্রমবর্ধমান খোলামেলা পরিবেশ, উন্নত ধরনের পারস্পারিক নির্ভরশীলতা এবং সমন্বয়।

 বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য : বিশ্বায়নের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। তা নিম্নে আলোচনা করা হলো— 

1. বিশ্বায়নের সাথে রাজনীতি এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয় নিবিড়ভাবে জড়িত থাকলেও মূলত এটি অর্থনীতিক প্রক্রিয়া । 
2. বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থব্যবস্থা পরস্পরের নিকট উন্মুক্ত হবার ফলে জাতীয় রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থেকে অর্থনীতি মুক্ত হবে এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি পারস্পরিক নির্ভরতার দ্বারা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়ে পড়বে। 

3. বিশ্বায়নের সঙ্গে উদারীকরণের নিবিড় সম্পর্কের কথা অনেকে বলেন

4. এই পারস্পারিক নির্ভরশীলতার দরুন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থব্যবস্থার মধ্যে যে ফারাক ছিল তার অবসান ঘটবে এবং অখণ্ডতা বা সংহতির আবির্ভাব ঘটবে।

5. বিশ্বায়ন ধারণাটি যেমন সংস্কার ও উদারীকরণের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত ঠিক তেমনি সুস্থিতিকরণ এবং কাঠামোগত সুবিন্যাস নামক দু'টি ধারণার সঙ্গে জড়িত।

 6. বিশ্বায়নের মধ্যে উন্মুক্ততা এবং উদারীকরণ বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে।  বিশ্বায়নের মধ্যে একটি পরিচালন বা প্রশাসনগত ধারণা নিহিত আছে বলে আমরা মনে করি।

7. বিশ্বায়ন ভৌগোলিক ব্যবধান মানে না। বিশ শতকের দ্বিতীয়ভাগ থেকে অর্থনীতির হালচাল দ্রুত বদলে যেতে শুরু করে।

8. কেউ কেউ মনে করেন যে উত্তরের শিল্প সমৃদ্ধ পুঁজিবাদী দেশগুলি প্রধানত নিজেদের স্বার্থেই বিশ্বায়ন বা উদারীকরণ দক্ষিণের উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এই উন্নয়নশীল দেশগুলির নতুন নতুন বাজার দখল করা, এই সমস্ত দেশে পুঁজি নিয়োগ করাই বিশ্বায়নের প্রধান লক্ষ্য ।